

এমনই সমস্যা দেখা দিয়েছিল গত বছর বর্ষায়। সামান্য ভিজেই আবেদ মিয়া অসুস্থ হয়ে পড়ে, কাঁপুনি দিয়ে প্রচণ্ড জ্বর আসে। সে জ্বরে বিছানায় পড়ে থাকে সপ্তাহ খানিক। ফলে চাল-ডাল সব ফুরিয়ে ঘরে দেখা দেয় তীব্র খাদ্য সংকট। ক্ষুধার জ্বালায় ছেলে মেয়ে কান্না-কাটি শুরু করে। তখন এলাকার দাদন মাতাব্বরের পরামর্শে আবেদ মিয়া ব্যাংক থেকে লোণ আনে তিন হাজার টাকা। কিছু দিয়ে নিজের চিকিৎসা করে, আর কিছু খরচ করে পরিবারের পিছনে। গত কয়েক মাসে না খেয়ে না পরে বিভিন্ন কিস্তিতে লোণের মূল টাকা পরিশোধ করেছে, বাকি রয়ে গেছে সুদের অতিরিক্ত টাকা। এখন রোজগার কম। জিনিসপত্রের দাম বেশি, তাই পরিবারের গ্লানি টেনেই কোমর ন্যুয়ে এসেছে আবেদ মিয়ার। সুদের টাকা যোগাড় করা এখন অসম্ভব ব্যাপার। তারপরেও অফিস থেকে লোক এসে তাগাদা দিচ্ছে বারবার সুদের টাকা পরিশোধ করার জন্য। গত সপ্তাহে অফিসার এসে শাসিয়ে গেছে যে, এক সপ্তাহের মাঝে সুদের টাকা পরিশোধ না করলে ভিটে-মাটি সব বাজেয়াপ্ত করা হবে। কিন্তু, টাকা দেয়ার মত সামর্থ তো আবেদ মিয়ার নেই। এলাকার চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিল ঋণ আনার জন্য। গরিব বলে তাকে ঋণ না দিয়েই তাড়িয়ে দেয় চেয়ারম্যান সাহেব। আবেদ মিয়া এখন নিরুপায়।
বাম প্যাডেলে চাপ দিতে দিতে আবেদ মিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। কাঁধের গামছা দিয়ে ঘামে ভিজা চেহারাটা একবার মুছল। সামনে কাছাড় বাজার। ভাড়াটা সেখানে নামিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বাড়ির পথ ধরবে এই আশায় জোড়ে প্যাডেল মারল আবেদ মিয়া।
“ও আবেদ মিয়া ! তুমি অহনও বাইত যাওনাই ? বাইত গিয়া দেহ তোমার বাল-বাচ্চার কী অইছে! ব্যাংকেততে লোক আইছিল সুদের টেহা নিবার। কিন্তু তোমারে না পায়া পোলাপাইন সবাইরে বাইন্দ্যা লয়া গেছে গা, আর তোমার বউরে মাইরা আড্ডি ভাইঙা থয়া গেছে।” ভাড়া নামিয়ে বটগাছটার নীচে বসতেই দোকানদার মোহাম আলী কথা কটি বলল। আবেদ মিয়ার ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠল। আর কিছু ভাবতে পারল না আবেদ মিয়া। রিকশায় প্যাডেল মেরে বাড়ির পথ ধরল।
“আছিয়া ! ও আছিয়া ! কই গেলা” ? রিকশাটা বাড়ির খলায় রেখে স্ত্রী আছিয়াকে ডাকতে ডাকতে বাড়িতে ঢুকল আবেদ মিয়া। কিন্তু বাড়িতে কোন সাড়াশব্দ নেই। ভিতরটা হাহাকার করে উঠল। আবার ডাকল। এবার ঘরের ভিতর থেকে ভেসে এল আহত মানুষের গোঙানি। ঈষৎ লাগানো কপাট খুলে ভিতরে ঢুকল আবেদ মিয়া। কিছুক্ষণ থ হয়ে রইল, তার স্ত্রী আছিয়া রক্তাক্ত দেহে মাটিতে পড়ে আছে। মুখ থেকে ভেসে আসছে গোঙানির আওয়াজ। মেয়ে মরিয়ম আর ছেলে দুটোকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। ভোরবেলা রেখে যাওয়া সুখের সাজানো সংসার এখন এক নিস্তব্ধ মৃত্যুপুরী। চল্লিশোর্ধ্ব কঙ্কালসার আবেদ মিয়া নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না, ধপাস করে পড়ে গেলো মাটিতে। মুখ থেকে ক্ষীণ স্বরে বেরিয়ে এল “হায় ! সুদের টাকা !!”
সুদের নির্মম কশাঘাতে জর্জরিত অনেক ‘আবেদ মিয়া’ আজও গুমরে কাঁদে সমাজের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।....
একবিংশ শতাব্দীর এই ক্ষণে সভ্যতা ঘুরে অর্থের চাকায়। অর্থ এখন পাশ্চাত্ত্য দর্শনে বিশ্বাসী মানুষের জীবনের চরম উদ্দেশ্য। অর্থের পাহাড় গড়ে তুলতে এখন আবিষ্কৃত হয়েছে অনেক নতুন নতুন পন্থা। তন্মধ্যে সর্বগ্রাসী পন্থার একটি নাম “সুদ”। সুদ দরিদ্রকে করে পথের ভিখারি আর ধনীকে করে স্বপ্ন-বিলাসী। সুদের এই অভিশাপ যে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সে সমাজে কি কখনো প্রতিষ্ঠিত হবে অর্থনৈতিক ভারসাম্য !! সে সমাজে কি পাওয়া যাবে মানবতার একটু ছোঁয়া !! মানবতা আর সুষম অর্থ ব্যবস্থা পেতে হলে ফিরে যেতে হবে ইতিহাসের সেই সোনালী করিডরে যেখানে ইসলাম রেখে গেছে সুদমুক্ত সমাজের আদর্শ অবকাঠামো।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ও সর্বকালের সার্বজনীন জীবন-বিধান। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম দিয়েছে সঠিক ও কল্যাণকর দিক নির্দেশনা। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকসহ সকল ক্ষেত্রে ইসলামের বিধি-বিধানই চিরন্তন, চির আধুনিক ও বাস্তবমুখী।
কিন্তু আজ থেকে চৌদ্দশত বছর আগে...., ইসলাম এসেছিল যে যুগে সে যুগের অর্থনীতি আর বিশ্বায়নের এ যুগের অর্থনীতি সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি বিষয়। পাহাড়ের পাদদেশে খেজুর পাতার জীর্ণ চাটাইয়ে বসে সে যুগের মানুষ স্যাটেলাইটের এ যুগের বহুমুখী অর্থনীতির কথা কল্পনাও করতে পারেনি। সে যুগে অর্থনীতি বলতে মানুষ বুঝত ব্যক্তিকেন্দ্রিক কৃষি কারবার আর ব্যবসা-বাণিজ্য, যার ফলে তখন অর্থনীতি নিয়ে ভিন্ন গবেষণা বা চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন ছিল না। শুধু মাত্র ব্যক্তি-বুদ্ধির মাধ্যমেই অর্থনীতির চাকা সচল ছিল বহুগুণে। তা সত্ত্বেও সেই কৃষি ও ব্যবসা নির্ভর যুগেই ইসলাম এই অর্থনীতির সুষম বন্টন ও সুদমুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার একটি আদর্শ রূপরেখা তৈরি করে গিয়েছিল এবং মানুষকে শিক্ষা দিয়েছিল যে, অর্থনীতি জীবনের চরম কোন উদ্দেশ্য নয় বরং উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সহায়ক মাত্র। ইসলামের এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সেই কৃষি-নির্ভর যুগে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল । এছাড়াও সরকারী ট্যাক্স, উশর ও যাকাতের সম্পদ এবং যুদ্ধলব্ধ সম্পদের সুষম বন্টন ও প্রকৃত হকদারের কাছে সম্পদ পৌঁছে দেয়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং মুদ্রাপ্রচলন, মুদ্রামান নিয়ন্ত্রণ ও বন্টন এবং সুদমুক্ত ঋণদানসহ সব ক্ষেত্রেই ইসলাম প্রণয়ন করেছিল সুশৃংখল ও আদর্শ নীতিমালা, যা সে যুগে অন্যান্য ধর্মে ছিল সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
বর্তমান যুগের মত ইসলাম পূর্ব যুগেও সমাজে সুদের উপস্থিতি কোন ক্রমেই কম ছিল না। তখনও সমাজের দরিদ্রশ্রেণী পিষ্ট হতো সুদের নির্মম যাতাকলে। কিন্তু সে যুগে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সুদি কারবারের প্রচলন ছিল। এ যুগের মত প্রাতিষ্ঠানিক সুদি প্রক্রিয়ার প্রচলন তখনও শুরু হয়নি। কিন্তু তখনই ইসলাম কঠোরভাবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলে দিয়েছে “বেচা-কেনা তো হালাল কিন্তু সুদ সম্পূর্ণ হারাম” এবং বাস্তবে সমাজ থেকে সুদকে নির্মূল করে বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছিল সুদহীন শোষণ মুক্ত আদর্শ সমাজ।
এভাবে ধীরে ধীরে ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা শাস্ত্রীয় রূপ লাভ করে। সর্বশেষ ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে এসে ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থা ধ্বংসের আগ মুহূর্তে ইসলাম সুদ ও শোষণ মুক্ত একটি পূর্ণাঙ্গ ও শাস্ত্রীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা রেখে যেতে সক্ষম হয়েছিল। যার নযীর ফিকাহের কিতাবসমূহের ‘কিতাবুল বুয়ূ, মুদারাবাহ, মুশারাকাহ, কাফালাহ, ওয়াকালাহ, মুযারা‘আহ, মুছাকাতাহ’ ইত্যাদি অধ্যায়ে বিদ্যমান রয়েছে।
কিন্তু ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের শেষ মুহূর্তে এসে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার পতন ঘটে। ফলে হারিয়ে যায় ইসলামি অর্থনীতির সেই চিরায়ত রূপরেখা। অন্যদিকে ১৪০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইউরোপ ছিল ঘুমন্ত, ছিল একটি দারিদ্র্যপীড়িত ও কৃষিনির্ভর রাষ্ট্র। অর্থ ব্যবস্থাপনায় একদিকে ইসলাম যখন সফলতার শীর্ষে ঠিক তখনও ইউরোপিয়ানরা অর্থনীতি বলতে ভিন্ন কিছু বুঝতো না। কিন্তু ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দ এই সময়ের মাঝে ইউরোপে দ্রুত শিল্পবিপ্লব ঘটে। ফলে অর্থনীতিতে খুলে যায় এক নয়া দিগন্ত। অর্থনীতি তখন কৃষি ও ব্যবসা থেকে আরেকটু ব্যাপক হয়ে জড়িয়ে পড়ে শিল্পের সাথে। মানুষের প্রয়োজনে গড়ে উঠে বিশাল বিশাল কল-কারখানা, মিল-ইন্ডাস্ট্রিজ ও ব্যাংক কোম্পানি। এর পর ধীরে ধীরে শুরু হয় আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও মুদ্রা লেনদেন। এসব কিছু নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি হয় বিশ্ব ব্যাংক।
অন্যদিকে বিংশ শতাব্দীতে এসে মানুষ প্রবেশ করে বিশ্বায়ন আর উৎকর্ষতার যুগে। এসময় দ্রুত আবিষ্কৃত হয় অত্যাধুনিক সব বিজ্ঞান প্রযুক্তি। যার ফলে অর্থনীতির বেষ্টনী ঘেরাও করে নেয় মানব সমাজের প্রতিটি বস্তু ও ব্যক্তিকে। কিন্তু অর্থনীতির বলয়ে এতসব উৎকর্ষ উন্নতি সাধিত হয়েছে ঠিক তখন যখন এই অঙ্গনে ইসলামি অর্থনীতি সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। এই আধুনিক অর্থনীতির জন্ম, বিকাশ ও লালন সবই হয়েছে পুঁজিবাদী ইউরোপিয়াদেন হাতে আর তারা এর বিন্যাস, উপস্থাপন সবই করেছে নিজেদের মত করে। অর্থ-সর্বস্ব মানসিকতার কারণে তারা অর্থ ব্যবস্থার মাঝে রেখে দিয়েছে বিশাল ফোকর এবং দুর্বলকে গ্রাস করার নিকৃষ্ট পন্থা- সুদিপ্রক্রিয়া, ইসলাম যাকে সম্পূর্ণ অবৈধ ঘোষণা করেছে। ফলে অর্থনীতির মৌলিক অবকাঠামোতে প্রবেশ করেছে অর্থসর্বস্ব মানসিকতা, সুদ ও শোষনের জঘন্য প্রবণতা। অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী তাদের একচেটিয়া ক্ষমতার বলে বিশ্বের প্রতিটি দেশে তাদের সুদি অর্থব্যবস্থাকে চাপিয়ে দিয়েছে এবং মানুষের মাঝে সৃষ্টি করে দিয়েছে অর্থসর্বস্ব মানসিকতা। যার ফলে তাদের সুদি ও শোষণমুখী অর্থ ব্যবস্থা খুব দ্রুত গ্রাস করে ফেলে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বাজার। ফলে বর্তমান সমাজের ক্ষুদ্র থেকে উচ্চস্তরের প্রতিটি ব্যক্তি ও বস্তু জড়িয়ে পড়েছে এই সুদি কারবারে। কেউ স্বেচ্ছায়, কেউ অনিচ্ছায়। আর সুদের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ কেবল দরিদ্রই হচ্ছে আর প্রভাবশালীরা গড়ে তোলছে টাকার পাহাড়। ফলে বিনষ্ট হচ্ছে সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য। একারণেই দেখা যায় একই সমাজে সম্পূর্ণ ভিন্ন দু’টি চিত্র; একজন পাঁচতলায়, অন্যজন গাছতলায়; একজন সুরম্য অট্টালিকায়, অন্যজন রেল লাইনের বস্তিতে; একজন আনন্দ ভোজনে চাইনিজ রেস্তোরাঁয়, অন্যজন ক্ষুধার জ্বালায় উচ্ছিষ্ট সন্ধানে ডাস্টবিনের ময়লা আবর্জনায়। এ হল ইউরোপিয়ানদের সৃষ্ট সুদি অর্থ ব্যবস্থার ইহকালীন চিত্র। অন্যদিকে সুদের পরকালীন ক্ষতি তো আরো ভয়াবহ।
ইউরোপিয়ানদের সৃষ্ট অর্থ ব্যবস্থার অসমবন্টন সুদের শোষণমুখী কারবার এবং মানুষের মাঝে বস্তুবাদী ও অর্থসর্বস্ব মানসিকতার কারণে বর্তমান যুগের ইসলামি ফিকাহবিদগণ অর্থনীতি নিয়ে পুনরায় চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা শুরু করেছেন এবং অর্থনীতিতে যে সকল অবৈধ ও ক্ষতিকর পন্থা ও কৌশলের অনুপ্রবেশ ঘটেছে সেগুলো দূর করে তার বৈধ বিকল্পপন্থা বের করার প্রয়াস গ্রহণ করছেন এবং এ বিষয়ে রচনা করছেন বিভিন্ন বই-পুস্তক। যার ফলে অনেক দেরিতে হলেও পুনরায় ইসলামি অর্থনীতিকে চালু করার জন্য বিশ্বে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংক ও ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান। এর উজ্জ্বল নমুনা হল “(ইসলামিক ডেভলপমেন্ট ব্যাংক), মিশরের নাসের সোস্যাল ব্যাংক, দুবাইয়ের দুবাই ইসলামি ব্যাংক, কুয়েতের কুয়েত ফাইন্যান্স ইউজ, সুদানের ফয়সাল ইসলামি ব্যাংক, জর্ডানের জর্ডান ইসলামি ব্যাংক ফর ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্টসহ” বর্তমান বিশ্বের প্রায় ২৪৩ টি ইসলামি ব্যাংক।
কিন্তু বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামি অর্থনীতির পিছনে কোন গবেষণা বা উদ্যোগ আজও নেয়া হয়নি। যেটুকু আছে তার সবটুকুই বেসরকারী উদ্যোগে “ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ, আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক ও সোস্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক” এর প্রকৃষ্ট উদাহারণ।
অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় সুদি কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়ার পিছনে সবচেয়ে বেশি কাজ করে যাচ্ছে (এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক)। এটি ইহুদী লবীর পরিচালিত একটি ব্যাংক। এদের মূল কাজ হল দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোকে ও রাষ্ট্রের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বড় অংকের ঋণ প্রদান করে চক্রাহারে দ্বিগুণ সুদ উসুল করে নেয়া এবং দক্ষিণ এশিয়াকে দরিদ্র করে রাখা। বাংলাদেশের বাজেটের অধিকাংশ ঘাটতি পূরণ করা হয় এডিবির ঋণের মাধ্যমে। কিন্তু পরবর্তীতে সুদ হিসাবে তাদেরকে প্রদান করতে হয় দ্বিগুণ টাকা, এভাবে রাষ্ট্রে ঋণ বাড়ে এবং দেশ দরিদ্র রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
এদিকে গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুদি কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে “গ্রামীণ ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংক, আশা” ইত্যাদি এন.জি.ও সংস্থাগুলো। ড. ইউনুসের নেতৃত্বে ইতিমধ্যে তারা দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের নামে ঋণ দিয়ে সুদি কারবারকে ছড়িয়ে দিয়েছে জালের মত। গ্রামের হতদরিদ্র মানুষগুলো প্রয়োজনে ঋণ নিয়ে পরে কষ্টার্জিত নিজের সঞ্চিত টাকাগুলো সুদ হিসেবে দিয়ে রাস্তায় নামছে ফকির হয়ে। যার ফলে বছরে বছরে দরিদ্রদের পিছনে ব্যয় করা কোটি কোটি টাকা গিয়ে জমা হচ্ছে সুদভিত্তিক মুষ্টিমেয় কিছু ব্যাংকে। আর দেশের বৃহৎ অংশ থেকে যাচ্ছে দারিদ্র্য সীমার নীচে।
বাংলাদেশের সবচে’ দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চল হল উত্তরবঙ্গ। সেখানে আধুনিকতার ছোঁয়া খুব একটা পৌঁছায়নি আজও। শিক্ষার হারও তুলনামূলক অনেক কম। যার ফলে শিল্পায়নের যুগেও ঐ অঞ্চলের মানুষ সম্পূর্ণ রূপে কৃষি নির্ভর এবং মঙ্গাপীড়িত। এজন্যই “গ্রামীণ ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংক” ইত্যাদি এন.জি.ও সংস্থাগুলোর দৃষ্টি এখন উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। ঋণ দানের নামে সুদ নিয়ে ঐ অঞ্চলের মানুষগুলোকে করছে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর। সুদ দিতে না পারলে ঘর-বাড়ি, ভিটে-মাটি বাজেয়াপ্তসহ শারীরিক নির্যাতনও করা হচ্ছে। এমনকি অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মের মত মূল্যবান বস্তুও তাদের হাতছাড়া করছে। ফলে উত্তরবঙ্গের প্রতিটি অঞ্চল এখন অর্থলোভী এন.জি.ও দের চারণভূমি। নিঃস্ব, অসহায় মানুষগুলো এখন তাদের অর্থনৈতিক বেড়াজালে আবদ্ধ। বহুকষ্টে অর্জিত নিজেদের সঞ্চিত ধন এন.জি.ও দের হাতে তুলে দিয়ে তারা এখন পথের ভিখারি হতে চলছে।
মানবতা ক্ষয়িষ্ণু উত্তরবঙ্গের হতদরিদ্র মানুষগুলোকে এই সুদের বহুমুখী ছোবল থেকে বাঁচানোর এখন একমাত্র উপায় হল ইসলামি পন্থায় সুদমুক্ত নিঃস্বার্থ ঋণদান প্রকল্প গ্রহণ করে মানুষের প্রয়োজন পূরণে সহায়তা করা। কেননা ওয়াজ-নসিহত করে আখেরাতে সুদের ভয়াবহ পরিণতির কথা মানুষকে বোঝানো যাবে ঠিক কিন্তু বিকল্প পন্থা গ্রহণ করা ছাড়া সুদ থেকে তাদেরকে বিরত রাখা কখনোই সম্ভব নয়। কারণ মানব জীবনে ঋণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সমাজের ছোট বড় যে কেউ যে কোন সময় যে কোন প্রয়োজনে ঋণের মুখোমুখি হতে পারে। বিশেষত দরিদ্রশ্রেণীর ঋণের প্রয়োজন পড়ে সবচে’ বেশী। আর ঋণের প্রয়োজন পড়লেই তাদের দ্বারস্থ হতে হয় ঋণদাতা ব্যাংকের নিকট। কারণ জনবহুল এ বিশ্বে মানুষের চাহিদা এখন অনেক, যা ব্যক্তিকেন্দ্রিক পূরণ করা অসম্ভব। তাই প্রয়োজন হয় প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিক উদ্যোগের। এজন্যই ব্যক্তিকেন্দ্রিক ঋণের বিপরীতে এখন গঠন করা হয়েছে ঋণদাতা ব্যাংক। আর ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ আনলেই সুদ দিতে হয় চক্রাহারে। সুতরাং সুদের এই চক্র থেকে তাদের বাঁচানোর একমাত্র উপায় হল সুদভিত্তিক ঋণদানের বিকল্পপন্থা হিসাবে ‘সুদমুক্ত নিঃস্বার্থ ঋণদান’ প্রকল্প গ্রহণ করা।
মূলত এতসব ভাবনা আর সুদীর্ঘ প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখেই উত্তরবঙ্গের লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী থানাধীন কিসামত চরিতাবাড়ী এলাকা থেকে কিছু আগ্রহী তরুণের উদ্যোগে শুরু হতে যাচ্ছে এ ধরণের সুদমুক্ত নিঃস্বার্থ ঋণদান প্রকল্প। প্রথমে এলাকাকেন্দ্রিক সুদমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণদান প্রকল্প গ্রহণ করে শুরু হবে এর সাহসী অগ্রযাত্রা। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি পল্লীতে ছড়িয়ে দেয়া হবে এ ধরণের কার্যক্রম এবং সমগ্র উত্তরবঙ্গকে বেষ্টন করে নেয়া হবে ইসলামি অর্থ ব্যবস্থার সুদহীন বলয়ে।
এসব কিছুর পিছনে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হল সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করে এলাকার হতদরিদ্র মানুষদেরকে সুদের বিষাক্ত ছোবল থেকে বের করে আনা এবং সামাজিক জীবনে মানুষকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। বিনিময়ে দুনিয়াতে কোন চাওয়া পাওয়া নেই। প্রত্যাশা শুধু নিষ্ঠা আর আস্থা। আর প্রতিদান তো দয়াময় আল্লাহর কাছে।
দয়াময় প্রভু! অন্তরগুলোকে পবিত্র ও নির্মোহ করে দাও। আমিন।
The casino review: BetMGM to launch new mobile - JTA Hub
উত্তরমুছুনBetMGM has 동두천 출장샵 revealed that it 강릉 출장마사지 will launch a mobile 순천 출장마사지 casino in 동두천 출장샵 Michigan. The mobile app 전주 출장안마 will launch in Pennsylvania, Michigan, New Jersey,